যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা: বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ
Meta: যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার পর বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা। ভিসা জটিলতা, কর্মসংস্থান এবং প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা।
ভূমিকা
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো শিক্ষা সমাপনান্তে তাদের ভবিষ্যৎ। যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার সুযোগ এবং এর পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবার বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হন। বিশেষ করে, পড়াশোনা শেষে সেখানে কাজের সুযোগ এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে দেশে ফিরে আসার বাধ্যবাধকতা নিয়ে আলোচনা করা হবে। এই বিষয়গুলো শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা এবং ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার মান বিশ্বজুড়ে সমাদৃত, এবং প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে বহু শিক্ষার্থী এখানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে আসেন। এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থা, গবেষণার সুযোগ এবং উন্নত জীবনযাত্রার কারণে এটি শিক্ষার্থীদের কাছে একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। তবে, পড়াশোনা শেষ করার পরে শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থান এবং ভিসা সংক্রান্ত কিছু জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। এই জটিলতাগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো এইচ-১বি ভিসা এবং গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া, যা বেশ কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
এই আর্টিকেলে, আমরা যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা সমাপনান্তে কি কি সুযোগ এবং চ্যালেঞ্জ রয়েছে, সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের একটি স্পষ্ট ধারণা দেওয়া, যাতে তারা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা আরও ভালোভাবে করতে পারে। আমরা ভিসা সংক্রান্ত নিয়মকানুন, কর্মসংস্থানের সুযোগ, এবং দেশে ফিরে আসার ক্ষেত্রে কি কি বিষয় বিবেচনা করা উচিত, সেই সম্পর্কেও আলোচনা করব।
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা এবং ভিসার নিয়মকানুন
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসার নিয়মকানুন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত, বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা এফ-১ ভিসার অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে আসেন। এই ভিসা তাদের সেদেশে একাডেমিক প্রোগ্রামগুলোতে অংশগ্রহণের অনুমতি দেয়। এফ-১ ভিসা মূলত তাদের জন্য যারা কোনো মার্কিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে চান, যেমন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অথবা অন্য কোনো একাডেমিক প্রোগ্রাম। এই ভিসার অধীনে, শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনার সময়সীমা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে পারেন।
এফ-১ ভিসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো স্টুডেন্ট অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ ভিজিটর প্রোগ্রাম (SEVP)। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে, মার্কিন সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এবং এক্সচেঞ্জ ভিজিটরদের তত্ত্বাবধান করে। শিক্ষার্থীদের অবশ্যই একটি SEVP-প্রত্যয়িত স্কুলে ভর্তি হতে হবে এবং তাদের স্ট্যাটাস বজায় রাখতে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো ফুল-টাইম শিক্ষার্থী হিসেবে নথিভুক্ত থাকা এবং তাদের অধ্যয়নের অগ্রগতি সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়মিতভাবে জানানো।
পড়াশোনা শেষ হওয়ার পরে, শিক্ষার্থীরা সাধারণত অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেনিং (OPT) এর জন্য আবেদন করতে পারেন। OPT হলো একটি অস্থায়ী কাজের অনুমতি, যা শিক্ষার্থীদের তাদের অধ্যয়ন ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত কাজ করার সুযোগ দেয়। সাধারণত, OPT-এর মেয়াদ ১২ মাস হয়ে থাকে, তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিত (STEM) এর শিক্ষার্থীদের জন্য এটি আরও ২৪ মাস পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। এই অতিরিক্ত সময় STEM OPT এক্সটেনশন নামে পরিচিত, যা শিক্ষার্থীদের মোট ৩৬ মাস পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার সুযোগ দেয়।
তবে, OPT শেষ হওয়ার পরে, শিক্ষার্থীদের সামনে H-1B ভিসার জন্য আবেদন করার সুযোগ থাকে, যা একটি কাজের ভিসা। H-1B ভিসা মূলত সেইসব বিদেশি কর্মীদের জন্য যারা বিশেষ পেশায় কাজ করতে চান, যার জন্য তাত্ত্বিক বা কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন। এই ভিসার মাধ্যমে, একজন বিদেশী কর্মী যুক্তরাষ্ট্রে তিন বছরের জন্য কাজ করার অনুমতি পান, যা পরবর্তীতে আরও তিন বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। H-1B ভিসা পাওয়া বেশ প্রতিযোগিতামূলক, কারণ প্রতি বছর নির্দিষ্ট সংখ্যক ভিসা ইস্যু করা হয় এবং এর জন্য প্রচুর আবেদন জমা পড়ে।
H-1B ভিসার চ্যালেঞ্জ
H-1B ভিসা প্রক্রিয়ার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এর প্রতিযোগিতা। প্রতি বছর, মার্কিন সরকার একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক H-1B ভিসা প্রদান করে, যা সাধারণত চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এর ফলে, অনেক যোগ্য প্রার্থী ভিসা পান না। এছাড়া, H-1B ভিসার জন্য আবেদন প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো H-1B ভিসার জন্য স্পন্সরের প্রয়োজন হয়। এর মানে হলো, কোনো মার্কিন কোম্পানিকে একজন বিদেশি কর্মীর জন্য H-1B ভিসার আবেদন করতে হয়। এই স্পন্সর খুঁজে বের করা অনেক সময় কঠিন হয়ে পড়ে, বিশেষ করে নতুন স্নাতকদের জন্য। অনেক কোম্পানি বিদেশি কর্মীদের স্পন্সর করতে দ্বিধা বোধ করে, কারণ এর সাথে অতিরিক্ত খরচ এবং আইনি জটিলতা জড়িত থাকে।
কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং বাস্তবতা
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষ করে, বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য এই বিষয়টি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ তাদের ভিসার মেয়াদ এবং ওয়ার্ক পারমিট সংক্রান্ত জটিলতা থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে কিছু বিশেষ ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ তুলনামূলকভাবে বেশি। এর মধ্যে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, এবং গণিত (STEM) অন্যতম। এই ক্ষেত্রগুলোতে চাকরির চাহিদা সবসময় বেশি থাকে, এবং STEM গ্র্যাজুয়েটদের জন্য H-1B ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনাও তুলনামূলকভাবে বেশি।
মার্কিন শ্রমবাজারের তথ্য অনুযায়ী, কম্পিউটার বিজ্ঞান, ডেটা সায়েন্স, প্রকৌশল, এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে চাকরির প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এই ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বাড়ছে, এবং কোম্পানিগুলো ভালো বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে। এছাড়া, ফিনান্স, অ্যাকাউন্টিং, এবং বিজনেস ম্যানেজমেন্টের মতো ক্ষেত্রগুলোতেও চাকরির সুযোগ রয়েছে, তবে এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা তুলনামূলকভাবে বেশি।
তবে, কর্মসংস্থানের সুযোগের পাশাপাশি কিছু বাস্তবতাও রয়েছে যা শিক্ষার্থীদের মনে রাখা উচিত। প্রথমত, H-1B ভিসা পাওয়া একটি কঠিন প্রক্রিয়া, এবং এর জন্য যথেষ্ট সময় এবং ধৈর্যের প্রয়োজন। অনেক শিক্ষার্থী OPT শেষ হওয়ার পরে H-1B ভিসা না পেলে দেশে ফিরে যেতে বাধ্য হন। দ্বিতীয়ত, মার্কিন কর্মবাজারে প্রতিযোগিতা অনেক বেশি, এবং ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের শুধু ভালো একাডেমিক ফলাফল থাকলেই চলবে না, বরং অন্যান্য দক্ষতাও অর্জন করতে হবে। এর মধ্যে যোগাযোগ দক্ষতা, সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা, এবং দলবদ্ধভাবে কাজ করার মানসিকতা অন্যতম।
নেটওয়ার্কিং এবং ইন্টার্নশিপের গুরুত্ব
যুক্তরাষ্ট্রে ভালো চাকরি পাওয়ার জন্য নেটওয়ার্কিং এবং ইন্টার্নশিপের গুরুত্ব অনেক বেশি। নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কোম্পানির কর্মকর্তাদের সাথে পরিচিত হতে পারেন, যা তাদের চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে। এছাড়া, ইন্টার্নশিপ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বাস্তব কর্মপরিবেশ সম্পর্কে ধারণা পান, যা তাদের কর্মজীবনে সফল হতে সাহায্য করে। অনেক কোম্পানি ইন্টার্নদের মধ্য থেকে ভালো পারফর্ম করা শিক্ষার্থীদের ফুল-টাইম চাকরির প্রস্তাব দেয়।
ক্যারিয়ার ফেয়ার এবং জব ফেয়ারগুলোতে অংশগ্রহণ করা নেটওয়ার্কিংয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই ফেয়ারগুলোতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পান এবং তাদের কোম্পানির সংস্কৃতি এবং চাকরির সুযোগ সম্পর্কে জানতে পারেন। এছাড়া, লিঙ্কডইন-এর মতো প্রফেশনাল নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রের পেশাদারদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন।
দেশে ফিরে আসার প্রস্তুতি এবং সুযোগ
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ শেষে দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত অনেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। বিশেষ করে, যারা H-1B ভিসা বা গ্রিন কার্ডের জন্য চেষ্টা করে ব্যর্থ হন, তাদের জন্য দেশে ফিরে আসা একটি বাস্তবসম্মত বিকল্প। তবে, দেশে ফিরে আসার আগে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন, যাতে এখানে এসে ক্যারিয়ার এবং জীবনের নতুন পথে সহজে মানিয়ে নেওয়া যায়।
প্রথমত, শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে চাকরির সুযোগ সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নেওয়া। বর্তমানে, বাংলাদেশেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভালো চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি, প্রকৌশল, এবং ব্যবসায় প্রশাসন খাতে। অনেক আন্তর্জাতিক কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, এবং তারা দক্ষ কর্মীর সন্ধান করছে। এছাড়া, দেশীয় কোম্পানিগুলোও এখন তাদের কার্যক্রমকে আরও আধুনিক এবং আন্তর্জাতিক মানের করার চেষ্টা করছে, যার ফলে নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের অর্জিত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর জন্য প্রস্তুত থাকা। যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করার সময় শিক্ষার্থীরা যে দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জন করেন, তা বাংলাদেশে তাদের কর্মজীবনে অনেক সাহায্য করতে পারে। তবে, বাংলাদেশে কাজের পরিবেশ এবং সংস্কৃতি যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে ভিন্ন হতে পারে, তাই এই বিষয়ে প্রস্তুতি রাখা উচিত। শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের যোগাযোগ দক্ষতা, সমস্যা সমাধান করার ক্ষমতা, এবং নেতৃত্বের গুণাবলী উন্নত করা, যা তাদের কর্মজীবনে সফল হতে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশে ক্যারিয়ারের সুযোগ
বাংলাদেশে এখন বিভিন্ন খাতে ক্যারিয়ারের সুযোগ বাড়ছে। তথ্যপ্রযুক্তি (IT) খাত একটি দ্রুত বর্ধনশীল খাত, এবং এখানে সফটওয়্যার ডেভেলপার, ডেটা সায়েন্টিস্ট, নেটওয়ার্ক ইঞ্জিনিয়ার, এবং সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের মতো পদের চাহিদা বাড়ছে। এছাড়া, তৈরি পোশাক শিল্প (RMG), ঔষধ শিল্প, এবং কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পেও চাকরির সুযোগ রয়েছে। এই শিল্পগুলোতে দক্ষ কর্মী এবং প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন লোকের প্রয়োজন।
উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশে সুযোগ বাড়ছে। অনেক সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নতুন নতুন বিভাগ খুলছে এবং গবেষণার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করছে। যারা শিক্ষকতা এবং গবেষণায় আগ্রহী, তাদের জন্য এই ক্ষেত্রটি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। এছাড়া, সরকারি চাকরি এবং উন্নয়ন সংস্থাতেও ভালো ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে।
উপসংহার
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ নিয়ে আসে, তবে এর সাথে কিছু চ্যালেঞ্জও জড়িত। পড়াশোনা শেষ করার পরে কর্মসংস্থানের সুযোগ এবং ভিসার নিয়মকানুন সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখা শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই জরুরি। H-1B ভিসার জটিলতা এবং গ্রিন কার্ড পাওয়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়া বিবেচনা করে, শিক্ষার্থীদের উচিত দেশে ফিরে আসার প্রস্তুতিও রাখা। বাংলাদেশে এখন বিভিন্ন খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ছে, এবং শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখা। সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতির মাধ্যমে, যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত কিছু প্রশ্ন (FAQ)
১. যুক্তরাষ্ট্রে এফ-১ ভিসা কি?
এফ-১ ভিসা হলো একটি অ-অভিবাসী ভিসা, যা उन শিক্ষার্থীদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে যারা যুক্তরাষ্ট্রে কোনো স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে চান। এই ভিসার অধীনে, শিক্ষার্থীরা কোনো কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, অথবা অন্য কোনো একাডেমিক প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারেন এবং সেখানে পড়াশোনা করতে পারেন। এফ-১ ভিসার মেয়াদ সাধারণত শিক্ষার্থীর প্রোগ্রামের সময়কালের উপর নির্ভর করে, এবং শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারেন।
২. OPT এবং CPT কি?
OPT (Optional Practical Training) এবং CPT (Curricular Practical Training) হলো দুটি প্রোগ্রাম যা এফ-১ ভিসাধারী শিক্ষার্থীদের তাদের অধ্যয়ন ক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত কাজের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ দেয়। CPT সাধারণত পড়াশোনার সময়কালে করা হয় এবং এটি কোর্সের অংশ হিসেবে গণ্য হয়। অন্যদিকে, OPT পড়াশোনা শেষ হওয়ার পরে করা হয় এবং এটি শিক্ষার্থীদের এক বছর পর্যন্ত কাজের অনুমতি দেয়। STEM (বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল, এবং গণিত) শিক্ষার্থীরা OPT এর মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়াতে পারেন।
৩. H-1B ভিসা কি এবং এটি কিভাবে পাওয়া যায়?
H-1B ভিসা হলো একটি কাজের ভিসা, যা उन বিদেশি কর্মীদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে যারা বিশেষ পেশায় কাজ করতে চান, যার জন্য তাত্ত্বিক বা কারিগরি দক্ষতার প্রয়োজন। এই ভিসা পেতে হলে, একজন কর্মীর কোনো মার্কিন কোম্পানি থেকে চাকরির প্রস্তাব পেতে হয়, এবং কোম্পানি সেই কর্মীর জন্য H-1B ভিসার আবেদন করে। H-1B ভিসার জন্য প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ভিসা ইস্যু করা হয়, এবং এর জন্য প্রচুর আবেদন জমা পড়ে, তাই এটি পাওয়া বেশ প্রতিযোগিতামূলক।
৪. গ্রিন কার্ড কি এবং এটি পাওয়ার প্রক্রিয়া কি?
গ্রিন কার্ড, যা অফিসিয়ালি পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট কার্ড নামে পরিচিত, হলো একটি নথি যা একজন বিদেশিকে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস ও কাজ করার অনুমতি দেয়। গ্রিন কার্ড পাওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে, যেমন পরিবারের সদস্যের মাধ্যমে, চাকরির মাধ্যমে, অথবা বিনিয়োগের মাধ্যমে। চাকরির মাধ্যমে গ্রিন কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে, একজন কর্মীর সাধারণত একটি মার্কিন কোম্পানি থেকে স্থায়ী চাকরির প্রস্তাব পেতে হয়, এবং কোম্পানি সেই কর্মীর জন্য গ্রিন কার্ডের আবেদন করে। এই প্রক্রিয়া বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ হতে পারে।
৫. পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আসার সুবিধা কি?
পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আসার অনেক সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত জ্ঞান এবং দক্ষতা দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে পারেন। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশে এখন বিভিন্ন খাতে চাকরির সুযোগ বাড়ছে, এবং ভালো বেতনে চাকরি পাওয়া সম্ভব। তৃতীয়ত, দেশে ফিরে শিক্ষার্থীরা তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে থাকতে পারেন, যা তাদের মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, বাংলাদেশে জীবনযাত্রার খরচ যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে অনেক কম, যা শিক্ষার্থীদের আর্থিক চাপ কমাতে সাহায্য করে।